kalchitro
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গুনারিতলা ইউনিয়ন ভূমি অফিস দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য


কালচিত্র | কালচিত্র প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২২, ০৭:৪৮ পিএম গুনারিতলা ইউনিয়ন ভূমি অফিস দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য

মোহাম্মদ শাহিন,(জামালপুর)মাদারগঞ্জ// 

মাদারগঞ্জ উপজেলার গুনারিতলা অবস্থিত গুনারিতলা ইউনিয়ন ভূমি অফিস দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। ওই অফিসের ভূমি সহকারি কর্মকর্তা কাফিউল ইসলাম টাকা ছাড়া কোনো কাজই করেন না। ভূমি সংক্রান্ত যেকোনো সেবার বিনিময়ে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা এমনই অভিযোগ  এলাকাবাসীর। এই অফিসে গ্রাহকদের হয়রানি নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, গুনারিতলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নামজারি, জমাভাগ, খাজনা আদায়, জমির পর্চা (খসড়া) তোলা সহ ভূমি সংক্রান্ত সকল কাজে সরকারি নিয়মকে তোয়াক্কা না করে অনৈতিকভাবে বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে। চুক্তির টাকা ছাড়া কোনো ফাইলই নড়ে না। টাকা না দিলে নির্ধারিত সময়ে কোনো কাজ আদায় করা যায় না। 

ওই ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গ্রাহক থেকে বাড়তি টাকা নেয়ার পরও বিভিন্নভাবে হয়রারি করছে এমনটাই অভিযোগ উঠেছে। 

গুনারিতলা ইউনিয়নের খুদ্দ জুনাইল এলাকার করিম মিয়া নামজারির জন্য ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে নামজারির জন্য আবেদন করে ঘুরতে থাকে, ঘুরাঘুরির এক পর্যায়ে জানতে পারে ঘুষ ছাড়া কাজ করবে না ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা কাফিউল ইসলাম। পরে নামজারির জন্য তাকে সাত হাজার টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হয় ভুক্তভোগী করিম মিয়া। 

করিম মিয়া বলেন, আমি আমার পৈতৃক সম্পত্তির নামজারির জন্য গুনারিতলা ভূমি অফিসে প্রথমে আবেদন দিলে কাজ করতে নানান টাল-বাহানা করতে থাকে ভূমি কর্মকর্তা কাফিউল ইসলাম। ঘুরাঘুরি ও টাল-বাহানার এক পর্যায়ে জানতে পারি টাকা ছাড়া কাজ হবে না। পরে ধারদেনা করে সাত হাজার টাকা দেই তাকে। ঘুষ দেয়ার পরেও দির্ঘদিন ধরে ঘুরাচ্ছে আমাকে। 

তিনি আরও বলেন, এবিষয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অগোচরে মাঠ পর্যায়ের গুনারিতলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে বলে জমির কাজে আসা ভূক্তভোগীদের দাবি। শুধু তাই-ই নয়, এর আগেও নামজারি করতে আসা এক সেবাপ্রার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১মার্চ রবিবার দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এক অভিযান পরিচালনা করেন দুদক পরিদর্শক টাঙ্গাইল জাহিদুল ইসলামসহ ৩ সদস্যের টিম। দুদকের উপস্থিতি টের পেয়ে গাঁ ঢাকা দেন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা কাফিউল ইসলাম।

গুনারিতলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে আসা এক গ্রাহক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, এই অফিসের নায়েব অনেক সময় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার সুবাদে অফিসের উম্মদাররা ভূমি অফিসে কাজে আসা গ্রাহকদের কাজ সম্পাদনের বিষয়ে টাকার বিনিময়ে চুক্তি করেন।

সেবা প্রাপ্তির ৮০ শতাংশ লোকই চরম হয়রানির শিকার হতে হয়; আজ না-কাল এভাবে সময়ক্ষেপণ করা হয়। সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে অতিরিক্ত হারে দাবিকৃত উৎকোচ না দিলে সেবা গ্রহীতারা পান না তাদের কাঙ্খিত সেবা।

ভূক্তভোগীরা জানান, গুনারিতলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দুর্নীতি এমন চরমে পৌঁছেছে যে সরকারি নীতিমালার বাইরে চুক্তি অনুযায়ী মোটা অংকের ঘুষ ছাড়া কোনো নামজারি হয় না। নামজারির জন্য ১০ হাজার থেকে মোটা অংক আদায় করা হয়।

ঘুষ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কাফিউল ইসলাম। তার দাবি, অভিযোগকারী করিম মিয়াকে তিনি চেনেন না। না চিনতে পারলেও তিনি বলেন, করিম যে জমি নিয়ে অভিযোগ দিয়েছেন, সেই জমি তার পিতা অনেক আগেই বিক্রি করে দিয়েছে।

পৈতৃক সম্পত্তি দখলে না থাকলে কাগজ অনুযায়ী নামজারি দেয়া যাবে কি? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি ওই কর্মকর্তা। 

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইলিশায় রিসিলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁকে ফোন কলে পাওয়া যায়নি।

Side banner