kalchitro
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যেমন পাত্রে রান্না করার যেমন ঝুঁকি


কালচিত্র প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২০, ০৪:২২ পিএম যেমন পাত্রে রান্না করার যেমন ঝুঁকি

সময়ের সাথে আমাদের জীবনে সব কিছুতেই পরিবর্তন এসেছে।খাদ্যাভাস থেকে শুরু কর বদলে গেছে খাদ্য সংরক্ষণ করার জিনিস,এমন কি খাবার খাওয়ার ডিসও।কিছুকাল আগেও আমাদের রান্না ঘরে শোভা পেত লোহা,মাটি,কাসা বা পিতলের হাড়ি,বাটি বা চামচ।সময়ের সাথে সাথে এইসব রান্না এবং খাওয়ার জিনিসের বদলে জায়গা করে নিয়েছে মেলামাইন,সিলভার,অ্যালুমিনিয়াম,ননস্টিক প্যান কিংবা সিলিকনের নানা জিনিস।তবে,আমরা খুব কম মানুষই রান্নার পাত্রের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে সচেতন।আমাদের কাছে মূল বিষয় হল সহজলভ্যতা,ব্যবহারের সুবিধা এবং হাতের নাগালে পন্যের মূল্য। তাই,আজকের পর্বে থাকছে বিভিন্ন ধরণের কুকওয়্যারের নানা দিক নিয়ে আলোচনা ...

রান্নার ক্ষেত্রে যে ধরণের পাত্র স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াতে পারে

বর্তমানে রান্না করার পাত্র হিসাবে ননস্টিকের প্যান খুবই জনপ্রিয়।দাম কিছুটা বেশি হলেও কম তেলে রান্না করা যায় বলে স্বাস্থ্য সচেতন অনেকের প্রথম পছন্দ ননস্টিক প্যান।তবে,ননস্টিক প্যান গুলোতে ননস্টিকের কোটিং এর জন্য ব্যবহিত “পার্ফ্লুরোওরাকিল”বা পিএফসিএস নামক রাসায়নিক পদার্থ মানব দেহ এবং পরিবেশ উভয়ের জন্য ক্ষতিকর বলে বিবেচিত।

এই উপাদানটির উচ্চ মাত্রার সংস্পর্শে থাকা পরীক্ষাগারের প্রাণীদের দেহে ক্যান্সার,লো বার্থ ওয়েট এবং দূর্বল ইমিউন সিস্টেমের সম্পর্ক পাওয়া গেছে।একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে,প্রতি ১০ জন আমেরিকান মানুষের মধ্যে ৯ জনের রক্ত প্রবাহ,বুকের দুধ এবং নবজাতকের রক্তে এই উপাদানটি অল্প পরিমাণে হলেও পাওয়া গেছে।

শুধু তাই নয় “পার্ফ্লুরোওরাকিল”বা পিএফসিএস নামক এই উপাদানটির কারণে মানব দেহে উচ্চ কোলেস্টেরল, অনিয়ন্ত্রিত থাইরয়েড,লিভারে প্রদাহ এবং খর্বকার শিশু জন্ম নিতে পারে।

অ্যালুমিনিয়ামের হাড়ি বা কড়াই রান্নার জন্য খুবই সহজলভ্য।ব্যবহারে সুবিধা থাকার কারণে প্রায় প্রতিটি ঘরেই রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয় অ্যালুমিনিয়ামের নানা জিনিস।তবে,এই ধরণের পাত্রও বিশেষ কিছু খাবারের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে।বিশেষ করে এসিডিক খাবারের বিক্রিয়া করে মেটালিক স্বাদের সৃষ্টি করে।

স্টেইনলেস স্টিলের পাত্রে রান্না করার সময় বেশ কিছু উপাদান যেমনঃ নিকেল,মলিবডেনাম,টাইটেনিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম এবং কার্বন ইস্পাত রিলিজ হতে পারে।যদিও গবেষকরা জানিয়েছেন এই উপাদান গুলো যে পরিমাণে বের হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক কোন বিপর্যয় ডেকে না আনলেও যাদের এই সব মেটালের প্রতি সেসসিটিভিটি আছে তাদের জন্য বিপদজনক হতে পারে।বিশেষ করে এসিডিক ফুড রান্নার সময় এটি বিক্রিয়া করে এবং নিরাপদ নয় তবে অন্য রান্নার ক্ষেত্রে 

কপার বা তামার পাত্রে রান্না করার সময় তাপ এবং খাবারের সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে তামার পাত্র তামা রিলিজ করে।আমাদের দেহের জন্য তামা খুবই সামান্য পরিমাণে দরকার হয়।আর,তামার পাত্রে রান্নার সময় যে পরিমাণ তামা রিলিজ হয় তা যদি খুব বেশি পরিমাণ হয় তবে বমি,ডায়রিয়া বা পেটে ব্যথার মত সমস্যা হতে পারে।তবে, স্টেইনলেস স্টিলের পাত্রের চেয়ে কপারের পাত্রে রান্না করা ভাল।

যে ধরণের রান্নার পাত্র স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়

 

এনামেল কোটেড কাস্ট আয়রনের পাত্র “সাধারণ আয়রনের” পাত্রের তুলনায় নিরাপদ।কারন,রান্নার সময় এটি লোহা নিঃসরণ করেনা।এই ধরণের পাত্র গ্লাস কোটিং এর মাধ্যমে তৈরি হয় বলে তাপ হয় একেবারে লোহার কড়াইয়ের মত কিন্তু তাপে লোহা নিঃসরণ করেনা।সব ধরণের রান্নার জন্য এটি নিরাপদ।

পৃথিবীর সবচাইতে নিরাপদ কুকওয়্যার সেট হল কাচের তৈরি বা সিরামিকের পাত্র।যদিও সব জায়গাতে কাচের তৈরি রান্নার পাত্র সহজলভ্য নয় আর কিছুটা ভঙ্গুর বলে অনেকেই এই ধরণের পাত্রে রান্না করতে ইচ্ছুক নন। তবে,সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করলে আপনাকে কাচের তৈরি পাত্রের প্রতি ভরসা রাখতেই হবে।তবে,সিরামিক বা কাচের পাত্রে জেকোন ধরণের ফাটল দেখা দিলে তা ব্যবহার বাদ দিতে হবে।

  সুতরাং,সিদ্ধান্ত আপনার।সুস্বাস্থ্য নাকি স্বাস্থ্য ঝুঁকি কোনটি বেঁছে নেবেন?


 লেখক : পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড।

Side banner