kalchitro
Bongosoft Ltd.
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী (১৭ মার্চ ১৯২০—১৭ মার্চ ২০২০)

বহু প্রতীক্ষার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ


কালচিত্র | এসএস মুন্না প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২০, ১১:২৯ পিএম বহু প্রতীক্ষার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ

সহস্রাব্দের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলার কোটি মুক্তিকামী জনতার কাণ্ডারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

‘তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,/ হৃদয়ে লাগিল দোলা_/ জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার, সকল দুয়ার খোলা_/ কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী?/ গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি:/ এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,/ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’—  আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যম তাই গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপানো এই কবিকে আখ্যায়িত করেছিল ‘রাজনীতির কবি’ বা ‘পোয়েট অব পলিটিক্স’ হিসেবে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি তিনি, কোটি কোটি বাঙালিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন ‘রক্ত যখন দিয়েছি, তখন আরও দেব’ বলে। দিয়েছিলেন মুক্তি ও স্বাধীনতা; দিয়েছিলেন নতুন এক রাষ্ট্র।

১৭ মার্চ (মঙ্গলবার) সেই মহান মানুষটি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে তার জন্ম।

জন্মশতবার্ষিকী উপলেক্ষে বছরব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন করা হবে।

দিবসটি উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও করোনাভাইরাসজনিত বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে মুজিববর্ষের কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) রাত ৮টায় বঙ্গবন্ধুর জন্মক্ষণে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আতশবাজির মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচির উদ্বোধন করা হবে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার ভাষণের পরপর আতশবাজির মাধ্যমে জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন।

গোটা জাতি গভীর শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করবে স্বাধীন রাষ্ট্র ও জাতিসত্তা পরিচয়ের রূপকার বঙ্গবন্ধুকে। তার জন্মদিন উদযাপিত হবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। জাতি এ দিনটিকে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবেও উদযাপন করে থাকে।

জাতির পিতার জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার শপথ নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

বর্ণাঢ্য কর্ম ও রাজনৈতিক জীবন : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্ম ও রাজনৈতিক জীবন অসামান্য গৌরবের। স্কুলজীবনেই তিনি যুক্ত হন  রাজনীতিতে। কৈশোরে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকাবস্থায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়ার কারণে প্রথমবারের মতো কারাবরণ করেন তিনি। ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। ম্যাট্রিক পাসের পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমানে মওলানা আজাদ কলেজ) অধ্যয়নকালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকসহ তৎকালীন প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ওই সময় থেকে ছাত্র-যুব নেতা হিসেবে রাজনীতির অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেন নিজেকে।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পরপরই ঢাকায় ফিরে নতুন রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা নিয়ে অগ্রসর হন তিনি। সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে গঠন করেন ছাত্রলীগ। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তৎকালীন ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠিত হলে তরুণ নেতা শেখ মুজিব দলটির যুগ্ম সম্পাদক নিযুক্ত হন, ১৯৫৩ সালে হন সাধারণ সম্পাদক। ১৯৫৬ সালে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নামকরণ করা হয় ‘আওয়ামী লীগ’।বঙ্গবন্ধু বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, আটান্নর আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন ও বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনসহ পাকিস্তানি সামরিক শাসনবিরোধী সব আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাঙালির অধিকার আদায়ের এসব আন্দোলনের কারণে বারবার কারাগারেও যেতে হয় তাকে।

১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছর যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাকে। আওয়ামী লীগ প্রধান হিসেবে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন তথা বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানের স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুসহ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নামে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে কারাগারে পাঠান তাদের। ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবকে কারামুক্ত করে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে সমগ্র বাঙালি।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার পক্ষে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায় পুরো দেশ। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের ম্যান্ডেট লাভ করে আওয়ামী লীগ; কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির এ নির্বাচনি বিজয়কে মেনে নেয়নি। এরপর স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে প্রথমে স্বাধিকার আন্দোলন এবং চূড়ান্ত পর্বে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ দেন বঙ্গবন্ধু।

এ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় একাত্তরের মার্চে নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন তিনি। ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এ ভাষণে সেদিন স্বাধীনতার ডাক দিয়ে ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামের দিক-নির্দেশনা দেন তিনি।

একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাসভবন থেকে ওয়্যারলেসে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু। এরপর তাকে তার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে। ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে বীর বাঙালি বিজয় ছিনিয়ে আনে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু। সদ্য স্বাধীন দেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কাজে আত্মনিয়োগ করেন নিজেকে। ১৯৭৫ সালে জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। এর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ১৫ আগস্টের কালরাতে নিজ বাসভবনে ক্ষমতালোভী ঘাতকদের হাতে নিহত হন সপরিবারে, স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর জীবনাবসান ঘটে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে পাঁচজনের ফাঁসির রায় ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর করা হয়।

স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সাম্য ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবিস্মরণীয় ভূমিকার জন্য তিনি সারাবিশ্বে সমাদৃত। এসব ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ‘জুলিও কুরি’ পদকে ভূষিত হন তিনি। এ ছাড়া বিবিসির এক জরিপে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু।

বেকার হোস্টেলে 'বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষ'-তে শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ ভাস্কর্য

বঙ্গবন্ধু ছিলেন ক্ষণজন্মা পুরুষ : বিশ্বনেতাদের চোখে তিনি ছিলেন ক্ষণজন্মা পুরুষ। অনন্য সাধারণ এই নেতাকে ‘স্বাধীনতার প্রতীক’ বা ‘রাজনীতির ছন্দকার’ খেতাবেও আখ্যা দেয়া হয়। বিদেশি ভক্ত, কট্টর সমালোচক এমনকি শত্রুরাও তাদের নিজ নিজ ভাষায় তার উচ্চকিত প্রশংসা করেন।

বিংশ শতাব্দীর কিংবদন্তী কিউবার বিপ্লবী নেতা প্রয়াত ফিদেল ক্যাস্ট্রো বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।

ক্যাস্ট্রো বলেন, ‘আমি হিমালয়কে দেখেনি, তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এই মানুষটি ছিলেন হিমালয় সমান। সুতরাং হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতা আমি লাভ করেছি।’ 

শ্রীলঙ্কার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লক্ষ্মণ কাদির গামা (নৃশংস হত্যার শিকার) বাংলাদেশের এই মহান নেতা সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া গত কয়েক শতকে বিশ্বকে অনেক শিক্ষক, দার্শনিক, দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক, রাজনৈতিক নেতা ও যোদ্ধা উপহার দিয়েছে। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান সবকিছুকে ছাপিয়ে যান, তার স্থান নির্ধারিত হয়ে আছে সর্বকালের সর্বোচ্চ আসনে।

‘‘বঙ্গবন্ধু ছিলেন জনগণের নেতা এবং তাদের সেবায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাকে দেয়া বঙ্গবন্ধু খেতাবে এই দেশপ্রেমিক নেতার প্রতি দেশের মানুষের গভীর ভালবাসা প্রতিফলিত হয়।’’

ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ২০১৩ সালের ৪ মার্চ নগরীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন শেষে মন্তব্য বইয়ে এমন মন্তব্য লিখেছিলেন।

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মন্তব্য বইয়ে লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সম্মোহনী এবং অসীম সাহসী নেতৃত্বের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধে তার জনগণের নেতৃত্বদান করেছিলেন।

জার্মানির সাবেক প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিয়ান উলফ বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেন, ‘এই স্মৃতি জাদুঘর আমাদের একজন মহান রাষ্ট্রনায়ককে স্মরণ করিয়ে দেয়, যিনি তার জনগণের অধিকার ও মর্যাদার জন্য লড়াই করেছিলেন এবং অতিদ্রুত স্বাধীনতা ও জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন।

ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধী বলেন, ‘দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন নেতা এবং রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। তিনি স্বাধীনতার জন্য প্রতিকূলতা ও বিরূপ পরিস্থিতি উপেক্ষা করে অটল সাহসিকতার সাথে লড়াই করেছেন।

বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে রয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের অনেক ছবি

মুজিবর্ষের কর্মসূচি : দিবসটি উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও করোনাভাইরাসজনিত বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে মুজিববর্ষের কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে।  মঙ্গলবার রাত ৮টায় বঙ্গবন্ধুর জন্মক্ষণে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আতশবাজির মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচির উদ্বোধন করা হবে।

রাষ্ট্রপতি তার ভাষণের পরপর আতশবাজির মাধ্যমে জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিুবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে জানান হয়, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সব বেসরকারি টিভি চ্যানেল, সোশ্যাল ও অনলাইন মিডিয়ায় একযোগে সম্প্রচার করা হবে।

গত ১০ জানুয়ারি (শুক্রবার) বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণ গণনা শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তেজগাঁও এলাকার পুরাতন বিমান বন্দরে (জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড) ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে ক্ষণ গণনার উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

জাতি যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মুজিববর্ষের সূচনা ও বঙ্গবন্ধুর জন্ম দিবসটি উদযাপন করবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে বাংলাদেশী দূতাবাসসমূহে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় উদযাপন করা হবে।

দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধন প্রকাশ করবে জাতীয় পত্র-পত্রিকা। বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে বিটিভিসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল, বাংলাদেশ বেতার এবং বেসরকারি এফএম রেডিও স্টেশনগুলো।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রেকর্ড করা ভাষণসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

এরই মধ্যে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোসহ ব্যাংক-বিমা সরকারি দফতর থেকে শুরু করে বিভিন্ন অভিজাত হোটেল, নগরের অলি-গলিতে অবস্থিত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যালয় বর্ণিল আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে সারাদেশে বিভিন্ন মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং অন্যান্য উপাসনালয়ে প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে সীমিত আকারে কর্মসূচি পালন করা হবে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী সোমবার (১৬ মার্চ) সংবাদ সম্মেলনে জানান, বড় ধরনের জমায়েত পরিহার করে উৎসবমুখর পরিবেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে অন্যান্য কর্মসূচি পালন করা হবে।

কামাল নাসের আরও বলেন, জনসমাগম পরিহার করে সারাদেশে একসঙ্গে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান দেশের সব গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : মুজিবর্ষ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল সাড়ে ৬ টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের সব আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির একটি প্রতিনিধি দল টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ।

রাত ৮টায় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ৩২ নং ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে এবং ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই আতশবাজি প্রদর্শনী হবে।

ঢাকার রবীন্দ্র সরোবর, হাতিরঝিল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি ও জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় আতশবাতি প্রদর্শনী হবে।

দৈনিক জাগরণের সৌজন্যে

Side banner