kalchitro
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ● টিভি থেকে নেয়া

আমার পিতা বাংলাদেশ নামের দেশটি উপহার দিয়েছেন


কালচিত্র প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২০, ১২:৪২ এএম আমার পিতা বাংলাদেশ নামের দেশটি উপহার দিয়েছেন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর শুভক্ষণে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভিডিওবার্তায় দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) রাত সোয়া আটটায় বঙ্গবন্ধুর জন্মগ্রহণের মুহূর্তটিতে দেয়া বাণীতে জন্মশতবার্ষিকী-মুজিববর্ষ উদযাপনের বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ নামের এই দেশটি উপহার দিয়েছেন। দিয়েছেন বাঙালিকে একটি জাতি হিসেবে আত্মপরিচয়ের মর্যাদা। তাই-তো তিনি আমাদের জাতির পিতা। তার নিজের জীবনে কোনও চাওয়া পাওয়া ছিল না। বাংলাদেশের মানুষের উন্নত, সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন তিনি। তার সেই ত্যাগ বৃথা যায়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে মর্যাদার আসনে আসীন। আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। গড়তে হবে জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। ঠিক যেভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মানুষকে ভালোবেসেছিলেন, সেভাবেই ভালোবাসতে হবে। তার আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষনটি হুবহু তুলে ধরা হলো—

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

প্রিয় দেশবাসী।
আসসালামু আলাইকুম।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী-মুজিববর্ষ উদযাপনের বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

দেশের ভেতরে এবং বাইরে অবস্থানরত বাংলাদেশের সকল নাগরিককে জানাই মুজিববর্ষের শুভেচ্ছা। একইসঙ্গে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি বিশ্ববাসীকে।

আমার নিজের এবং ছোট বোন শেখ রেহানার পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বাংলাদেশের সকল বয়সের এবং শ্রেণি-পেশার মানুষকে।

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হয়েছে। তবে বছরব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করবো।

একই কারণে বিদেশি অতিথিবৃন্দের সফর স্থগিত করা হয়েছে। ভুটানের মহামান্য রাজা জিগমে খেসার নমগেয়েল ওয়াংচুক, নেপালের মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারি, ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টিনিও গুতেরাস এবং ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসুফ আল ওথাইমিন-সহ বেশ কয়েকজন বিদেশি শুভাকাঙ্ক্ষী ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আমি তাদের ব্যক্তিগতভাবে এবং বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

আজকের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি ১৫ই আগস্টের শহীদদের প্রতি। স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদকে। নির্যাতিত মা-বোন এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। মুক্তিযোদ্ধাদের সালাম।

প্রিয় দেশবাসী,
আজ ১৭ই মার্চ। ১৯২০ সালের আজকের দিনে এই বাংলায় জন্ম নিয়েছিলেন এক মহাপুরুষ। তিনি আমার পিতা, শেখ মুজিবুর রহমান।

বাংলাদেশ নামের এই দেশটি তিনি উপহার দিয়েছেন। দিয়েছেন বাঙালিকে একটি জাতি হিসেবে আত্মপরিচয়ের মর্যাদা। তাই তো তিনি আমাদের জাতির পিতা।

দুঃখী মানুষকে ক্ষুধা-দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে নিজের জীবনের সব সুখ-আরাম বিসর্জন দিয়ে তিনি সংগ্রাম করেছেন আজীবন। বারবার কারারুদ্ধ হয়েছেন। মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাঁকে ব্যথিত করতো। অধিকারহারা দুঃখী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যেকোনও ত্যাগ স্বীকারে তিনি দ্বিধা করেননি। এই বঙ্গভূমির বঙ্গ-সন্তানদের একান্ত আপনজন হয়ে উঠেছিলেন—তাই তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’।

আজ থেকে শুরু হয়ে ২০২১ সালের ২৬-এ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ উদযাপন করা হবে। ২০২১ সালে উদযাপিত হবে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিভিন্ন বন্ধুপ্রতিম দেশ, ইউনেসকো, ওআইসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা মুজিববর্ষ উদযাপনে অংশীদার হয়েছে। সকলকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের প্রতি। আমরা মুজিববর্ষ পালনের সুযোগ পেয়েছি। এ যে আমাদের জীবনে কত বড় পাওয়া, তা ভাষায় বোঝাতে পারবো না। আমি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই দেশবাসীর প্রতি, যাঁরা আমার দল, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে, পরপর তিনবার সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে মুজিববর্ষ উদযাপনের সুযোগ করে দিয়েছেন।

প্রিয় দেশবাসী,

ছোটবেলা থেকেই মানুষের দুঃখ-কষ্টে ব্যথিত হতেন জাতির পিতা। অকাতরে বিলিয়ে দিতেন তাঁর জামাকাপড়, বই, ছাতা। যার যখন যা প্রয়োজন মনে করতেন, তাকে নিজের জিনিস দিয়ে দিতেন। নিজের খাবারও তিনি ভাগ করে খেতেন। দুর্ভিক্ষের সময় গোলার ধান বিলিয়ে দিতেন। মানুষের জন্য কিছু করতে পারার মধ্যেই তিনি আনন্দ পেতেন।

নিজের জীবনের কোনও চাওয়া পাওয়া ছিল না। বাংলাদেশের মানুষকে উন্নত, সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন তিনি। তাঁর সে ত্যাগ বৃথা যায়নি।

আজকে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে মর্যাদার আসনে আসীন। আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। গড়তে হবে জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

আজকের শিশু-কিশোর, তরুণ সমাজের কাছে আমার আবেদন, তোমরা দেশকে এবং দেশের মানুষকে ভালোবাসবে। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা। স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলার উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে তোমাদের নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। ঠিক যেভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের মানুষকে ভালোবেসেছিলেন, সেভাবেই ভালোবাসতে হবে। তাঁর আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।

পিতা, ঘাতকের নির্মম বুলেট কেড়ে নিয়েছে তোমাকে। তোমার দেহ রক্তাক্ত করেছে। তোমার নাম বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওরা পারেনি। ঘাতকেরা বুঝতে পারেনি তোমার রক্ত ৩২ নম্বর বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে ছড়িয়ে গেছে সারা বাংলাদেশে। জন্ম দিয়েছে কোটি কোটি মুজিবের।

তাই আজ জেগে উঠেছে বাংলাদেশের মানুষ সত্যের অন্বেষণে। ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না। আজ শুধু বাংলাদেশ নয়, তোমার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশকে বিশ্ব চিনে নিয়েছে তোমার ত্যাগের মহিমায়।

পিতা, তোমার কাছে আমাদের অঙ্গীকার, তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়বোই। আর সেদিন বেশি দূরে নয়।

তুমি ঘুমিয়ে আছো টুঙ্গিপাড়ার সবুজ ছায়াঘেরা মাটিতে পিতামাতার কোলের কাছে। তুমি ঘুমাও পিতা শান্তিতে। তোমার বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।

আমরা জেগে রইবো তোমার আদর্শ বুকে নিয়ে। জেগে থাকবে এ দেশের মানুষ - প্রজন্মের পর প্রজন্ম - তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে। তোমার দেওয়া পতাকা সমুন্নত থাকবে চিরদিন। কবিগুরুর ভাষায় তাই বলতে চাই-

তোমার পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শকতি।

তোমার সেবার মহৎ প্রয়াস সহিবারে দাও ভকতি।

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উদযাপনে যাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, আমি সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সবাইকে আবারও ধন্যবাদ জানিয়ে আমি মুজিববর্ষের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।

খোদা হাফেজ।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু

বিএইচবি। 

Side banner