সেলিম উদ্দিন
স্বপন সাহা, একজন প্রধান শিক্ষকের কথা
স্বপন সাহা, আপাদমস্তক একজন শিক্ষক। কাকতালীয়ভাবে প্রায় পঁচিশ বছর আগে তাঁর সাথে পরিচয়। তখন আমি ছাত্রত্ব শেষ করিনি কিন্তু তিনি শিক্ষকতা করছিলেন। তবুও আমাদের মাঝে এক ধরণের সম্পর্কে তৈরি হয়েছিল। এখনো সে সম্পর্ক সতেজ আছে। তিনি আমাকে তাঁর পরিবারের সদস্য হিসেবে গণ্য করেন। বয়সে অগ্রজ এ মান্যবর শিক্ষক এখনো সাতকানিয়ার বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নলুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বী। আমি প্রাক্টিসিং মুসলিম কিন্তু আমাদের সম্পর্কে তো ধর্ম আসেনি।
ধর্মকে যারা বিভাজনের, বিদ্বেষের, নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে তাদের জন্য ধর্ম দায়ী হতে পারে না। ব্যক্তির আচরণ, অসৎ উদ্দেশ্য, হীনস্বার্থই এজন্য দায়ী।
আমরা এ সত্যটা ভুলে যাই যে, প্রতিটি ধর্মেই কিছু অধার্মিক লোক থাকে যারা স্বার্থের কাছে সবকিছু বিলিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করে না।
এজন্য সামগ্রিকভাবে ধর্মকে ও ধর্মের অনুসারীদের ঢালাওভাবে দোষারোপ করা যায় না।
কিন্তু পানি ঘোলা করে মাছ শিকার করা শিকারীরা এই সুযোগটাই নেয়।
আমার ঢের বন্ধু আছে যারা সনাতন ধর্মের অনুসারী। কিন্তু আমাদের বন্ধুত্বের মাঝে ধর্মীয় সীমারেখা কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
নিজের কথা দিয়ে শেষ করি। ২০১৮ সালে আমি উচ্চ মাধ্যমিকের ইংরেজি বিষয়ের প্রধান পরীক্ষক ছিলাম। অভিজ্ঞরা জানেন প্রধান পরীক্ষকের অধীনে বেশ কয়েকজন পরীক্ষক থাকেন।
হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম ঐ রামাদ্বানে সস্ত্রীক ওমরাহ করতে যাব কিন্তু বাসা ভর্তি খাতা। নিজের, পরীক্ষকদের। এক কিস্তি খাতার OMR বোর্ডে জমা দিলাম। মাত্র তের দিনের জন্য ওমরাতে যাবো। তৎকালীন উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে বিষয়টা জানালাম। তিনি মাত্র কিছুদিন আগে ঐ পদে এসেছেন। মুসলিম, আমার স্বজাতীয় কিন্তু তিনি আমাকে অনুমতি দিতে কিছুটা ইতঃস্তত বোধ করলেন।
মাধ্যমিক শাখায় উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে কর্মরত ছিলো আমার কলেজ জীবনের বন্ধু প্রসেনজিৎ পাল। বর্তমানে বাকলিয়া সরকারি কলেজ, (চট্টগ্রাম) সহযোগি অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছে। তাকে বিষয়টা বললাম। সে আমাকে বললো- "তুই যা, ওমরাহ শেষ করে আয়। আমি কন্ট্রোলার স্যারকে বিষয়টা জানিয়ে রাখবো।"
যারা সাম্প্রদায়িক মানুষ তাদের বলবো এটাকে আপনারা কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন? বন্ধত্ব নাকি অসাম্প্রদায়িক মনোভাব?
বন্ধু প্রসেনজিৎসহ আমার অনেক সনাতন ধর্মাবলম্বী বন্ধু আছে যারা আমার কাছে বন্ধুই। সনাতন ধর্মাবলম্বী নয়। তাদের কাছেও আমি বন্ধু, মুসলিম কিংবা মুসলমান নয়।
দয়া করে হিন্দু-মুসলমানের এ সম্প্রীতির বন্ধনকে ছিঁড়ে ফেলবেন না। সমাজকে কলুষিত করবেন না।
নিজের স্বার্থের জন্য সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেবেন না।
আপনার মতামত লিখুন :