মার্বেল খেলা
কালচিত্র | চন্দন আনোয়ার প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২০, ১১:৫৮ এএম

উন্মাদের মতো বুঁদ হয়ে থাকতাম মার্বেল খেলায়। মার্বেলের চেয়ে মুল্যবান কিছু পৃথিবীতে আছে জীবনে তখন কল্পনাও করিনি। ঈদের পুরোটা দিনই মার্বেল খেলে কাটিয়েছি। স্কুল ফাঁকি দিয়ে কতোদিন যে শুধু মার্বেল খেলে ধুলোবালির শরীর নিয়ে বাড়ি ফিরেছি! যেদিন জিতেছি প্যান্টের দুই পকেট ভরে গেছে বিচিত্র রঙের মার্বেলে; বাড়ি ফিরেছি আনন্দে লাফিয়ে। সেসব মার্বেল কখনো বাঁশের ভেতেরে কখনো মাটির নিচে আবার কখনো ধানের গোলায় মণিমুক্তোর মতো লুকিয়ে রেখেছি যেন কেউ চুরি না করে। আর যেদিন হেরেছি, বেলাশেষে বাড়ি ফিরেছি শূন্য পকেটে, বিষণ্ন মনে। কোনোদিন কেঁদে চোখের জল নিয়ে ফিরেছি।
দাদির শাড়ির আঁচলে গিঁটে হরিণ মার্কা এক টাকার নোট থাকবেই। যেদিন আমি মার্বেল খেলায় হেরে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরি, সেদিন দাদি আঁচলের গিঁট খোলেন। সেই সময়, হরিণ মার্কা এক টাকা নোটের চেয়ে লোভনীয় কিছু ছিল না পৃথিবীতে।
কুয়া থেকে পানিভর্তি বালতি তোলার ফাঁকে অথবা ধুলোবালিতে একাকার শরীরে-প্যান্টে বাংলা সাবান মেখে পরিষ্কার করার ফাঁকে দাদি বলতেন, আজ হেরেছিস, কাল জিতবি, না হয় পরশু জিতবি, একদিন তো জিতবিই, কাঁদছিস কেন? আজ-ই কী শেষ খেলা?
শিশুমন, তবু এটুকু বুঝেছি, খেলার শেষ নেই, তাই কাঁদলে চলবে না, কাল মতলব-নজরুলকে হারাতে হবে যে করেই হোক। হারিয়ে প্যান্টের দুই পকেটে ভরে ফেলব মার্বেলে।
দাদি সেদিন বলেনি অথবা শেখায়নি। বলার কিংবা শেখানোর মতো জীবনদীক্ষা আমার অশিক্ষিত দাদির ছিল না। এখন শিখেছি, জীবনের অন্য নাম খেলা। হার-জিতের খেলা। কোন খেলোয়াড় শুধু জিততেই খেলে, জিতেই ঘরে ফেরে, খেলা শেষে বেলা শেষের অপেক্ষা করে না।
লেখার তাং : ৩ মে’ ২০২০, রাজশাহী।
আপনার মতামত লিখুন :