kalchitro
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার প্রতিষেধক উদ্ভাবনে মার্কিন বিজ্ঞানীদের চমক


কালচিত্র | এস এম সাব্বির খান প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২০, ১১:০৯ এএম করোনার প্রতিষেধক উদ্ভাবনে মার্কিন বিজ্ঞানীদের চমক

সকল জল্পনা-কল্পনা, আতঙ্ক আর উদ্বেগকে দূরে ঠেলে, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট ব্যাধি কোভিড-১৯ কে পরাস্ত করতে 'রেমডেসিভির' নামক মারণাস্ত্র উদ্ভাবনে বৈপ্লবিক সাফল্য অর্জনের পথে রয়েছেন দুই মার্কিন চিকিৎসা  বিজ্ঞানী। আর এই কৃতিত্বের স্বীকৃত অর্জন এখন কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র।

 

সবকিছু ঠিক থাকলে অল্প সময়ের মধ্যেই ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভিস মেডিকেল সেন্টারের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ জর্জ থম্পসন এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী সার্জন জেনারেল ও ফুসফুসের বিশেষজ্ঞ ডা. রিচার্ড চাইল্ডস তাদের উদ্ভাবিত সেই বহুল প্রত্যাশিত মহাওষুধটির কার্যকারীতার চূড়ান্ত পরীক্ষায় সাফল্য অর্জনে পেয়ে যাবেন কভোডি-১৯ নামক প্রাণঘাতী সংক্রামণ ব্যাধিটির প্রতিষেধকের স্বীকৃতি।

রোববার (১৫ মার্চ) আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা ডেইলি মেইল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মিলেছে এমনই আশা জাগানিয়া তথ্য।

যুক্তরাষ্ট্রের এ দুই শীর্ষ চিকিৎসক জানিয়েছেন যে, একটি পরীক্ষামূলক ওষুধের মাধ্যমে করোনভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। মোট ১৫ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত গুরুতর রোগীর ওপরে এই ওষুধ পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকেই সুস্থ হয়ে ওঠছেন বলে জানা গেছে।

করোনায় আক্রান্ত এক মার্কিন মহিলার উপরে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রতিষেধক ওষুধ প্রয়োগ করা হয় বলে জানান তারা। ওই মহিলার শরীরে গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২৬ তারিখে করোনার উপস্থিতি ধরা পড়ে। তার অবস্থা ছিল গুরুতর। এই প্রতিষেধকের গবেষণা দলে ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভিস মেডিকেল সেন্টারের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ জর্জ থম্পসন। 

শুক্রবার (১৩ মার্চ) একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ম্যাগাজিনে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি জানান, ‘আমরা ভেবেছিলাম তিনি মারা যাবেন, তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি।’ দ্য ডেইলি মেইল

জানা যায়, ওই মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করার ৩৬ ঘন্টা পরে, ডাক্তাররা তাকে 'রেমডেসিভির' দিয়ে চিকিৎসা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এই ওষুধ ‘আইভি’ বা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে সরাসরি রক্তে প্রবেশ করানো হয়। এটি শরীরে থাকা ‘আরএনএ পলিমেরাজ’ নামের একটি এনজাইম বিকল করে দেয়। অনেক ভাইরাস নিজেদের অনুলিপি তৈরি করতে এই এনজাইম ব্যবহার করে।

রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ার কারণে চিকিৎসকরা কোন ক্লিনিকাল ট্রায়াল ছাড়াই এই প্রতিষেধক ব্যবহারের জন্য এফডিএর (ফেডারেল ডিপার্টমেন্ট অব রিসার্চ) কাছ থেকে ‘বিশেষ বিবেচনায়’ ব্যবহারের অনুমতি পেতে সক্ষম হন। এটি প্রয়োগের পরে একদিনের মধ্যেই মহিলাটির শরীরে ভাইরাসের পরিমাণ কমতে থাকে ও তার অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে। গোপনীয়তার কারণে রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়ানো হয়েছে কিনা তা প্রকাশ করেননি ডাক্তার থম্পসন, তবে তিনি জানিয়েছেন যে, রোগী ভাল আছেন।

একইভাবে, ডায়মন্ড প্রিন্সেস ক্রুজ জাহাজে থাকা ১৪ যাত্রী, যাদের শরীরে করোনভাইরাস ধরা পড়েছিল, তাদরে ওপরেও এই ‘রেমডেসিভির’ ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এ বিষয়ে জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটসের সহকারী সার্জন জেনারেল এবং ফুসফুসের বিশেষজ্ঞ রিচার্ড চাইল্ডস শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেছেন যে, জাপানের একটি হাসপাতালে পরীক্ষামূলকভাবে এই ওষুধ দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা করা হয়েছিল। তিনি জানান, রোগীদের সবাই খুব গুরুতর অসুস্থ ছিলেন এবং তাদের গড় বয়স ছিল ৭৫ বছর। তাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই অল্প সময়ের মধ্যেই মারা যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু, এই ওষুধ প্রয়োগের দু’সপ্তাহ পরে দেখা গেল কেউ মারা যায় নি এবং তাদের অর্ধেকেরও বেশি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এটা একেবারে আশ্চর্যজনক ঘটনা বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তবে, উভয় ডাক্তারই স্বীকার করেছেন যে, ‘রেমডেসিভির’র ক্ষেত্রে আরও পরীক্ষা করা দরকার। এ বিষয়ে থম্পসন বলেন, ‘ওষুধটির কারণে নির্দিষ্ট কিছু রোগীর লিভারে বিষক্রিয়া হতে পারে এবং অন্যান্য সংস্থাগুলোও আরও কিছু পরীক্ষামূলক ওষুধ নিয়ে এগিয়ে আসছে যা বেশি কার্যকর হতে পারে।’ অন্যদিকে, ডাক্তার চাইল্ডস ‘রেমডেসিভির’ সম্পর্কে বলেন, ‘ড্রাগের কোন ক্ষতিকর প্রভাব আছে কী না, তা নির্ধারণ করতে আমাদের কিছুটা সময় লাগবে।’

মার্কিন জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটস-এর তথ্য অনুসারে, ‘রেমডেসিভির’ সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা মূল্যায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নির্ধারিত কিছু হাসপাতালে ভর্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রাপ্ত বয়স্ক রোগীদের উপরে ‘নিয়ন্ত্রিত ক্লিনিকাল ট্রায়াল’ শুরু করেছে ইউনিভার্সিটি অব নেব্রাস্কা। তাদের প্রত্যাশা, সাফল্য অর্জনের মধ্যদিয়ে দ্রুতই করোনা মহামারির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার লড়াইয়ে মাঠে নামবেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।

তথ্যসূত্র সহায়ক: দ্য ডেইলি মেইল, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল

এসকে

Side banner