kalchitro
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

লেখাপড়া করে যে অনাহারে মরে সে


কালচিত্র | আনোয়ার সাঈদ প্রকাশিত: জুন ২৯, ২০২১, ০৯:২১ পিএম লেখাপড়া করে যে অনাহারে মরে সে

আনোয়ার সাঈদ

লেখাপড়া করে যে অনাহারে মরে সে

 

অনেক আগে সত্যজিৎ রায়ের একটা সিনেমা দেখেছিলাম। অনেকেই দেখেছেন, ছবির নাম 'হীরক রাজার দেশে'। সেখানে পাঠশালায় শিক্ষক (অভিনেতা সৌমিত্র চ্যাটার্জি) ছাত্রদের হিতোপদেশ শেখাচ্ছিলেন, এমন সময় রাজা এসে জিজ্ঞেস করলেন কি শেখানো হচ্ছে? শিক্ষক জবাব দিলেন হিতোপদেশ। জবাবে রাজা জিজ্ঞেস করলেন কার উপদেশ? শিক্ষক নিশ্চুপ রইলেন। রাজা বললেন যার কোনো নাম নাই তার কোনো দাম নেই। এই বলে রাজকবিকে বললেন শোনাও রাজার বচন,-

"লেখাপড়া করে যে অনাহারে মরে সেই

জানার কোনো শেষ নাই,জানার চেষ্টা বৃথা তাই

বিদ্যালাভে লোকসান, নাই অর্থ নাই মান

হীরক রাজা বুদ্ধিমান, কর সবে তার জয় গান।"

বর্তমানে করোনা ভাইরাসের মহাদুর্যোগে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ কষ্টে আছে। বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের অবস্থা শোচনীয়। খবরে প্রকাশ কুষ্টিয়ার একটি বেসরকারি কলেজ শিক্ষক বেতন না পেয়ে পেটের দায়ে হাটে-বাজারে, গরু-ছাগলের ঔষধ বিক্রি করছেন। দিনাজপুরের এক শিক্ষক চক-ডাস্টারের বদলে হাতে তুলে নিয়েছেন কোদাল, ঝুড়ি। আরেক কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক ইজিবাইক চালাচ্ছেন। চৌদ্দ লাখ বেসরকারি শিক্ষক পরিবারের এখন দিশেহারা অবস্থা। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা (ব্যতিক্রম ছাড়া) ৬৫ হাজার কিন্ডারগার্টেনে সাতলক্ষ শিক্ষক চারমাস ধরে নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না। এসব কিন্ডারগার্টেন সম্পুর্ণ বেসরকারি মালিকানাধীন। নন এমপিও ভুক্ত অনার্স-মাস্টার্স কলেজের প্রায় দশ হাজার শিক্ষকেরাও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এছাড়াও অসংখ্য মাদ্রাসার শিক্ষক রয়েছেন।

প্রতিষ্ঠিত নামি-দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে এই অবস্থায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে নন এমপিও লক্ষাধিক শিক্ষক, কর্মচারিদের জন্য ৪৬ কোটি টাকা এককালীন বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু এগুলো যথেষ্ট নয়। তাছাড়া এভাবে রাষ্ট্রীয় অনুদান দিয়ে কতদিন চালানো সম্ভব হবে সেটাও বিবেচনার বিষয়।

বর্তমানে আমাদের দেশে নানামুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে। অপরিকল্পিত এই বহুমুখী শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তে অবিলম্বে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। আমাদের শিক্ষানীতি প্রণীত হয় কিন্তু বাস্তবায়িত হয় না।

শিক্ষাক্ষেত্রে রাষ্ট্রের প্রাথমিক দায়িত্ব কী? সকল নাগরিকের ন্যূনতম শিক্ষালাভের ব্যবস্থা করা। সবাইকে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে হবে সেটা না কিন্তু বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিতের চাহিদার চেয়ে উচ্চশিক্ষার চাহিদা বেশি এবং এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে যেয়ে নতুন নতুন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠছে, কলেজে, কলেজে অনার্স, এম, এ পড়ার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে।

এক্ষেত্রে আমি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সদ্যপ্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যারের একটি বক্তব্য তুলে ধরছি।

তাঁর মতে, "উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ভিড়টা যথার্থ কীনা, তা একবার ভেবে দেখা দরকার। আমার বিশ্বাস, ন্যূনতম শিক্ষালাভ প্রতিটি নাগরিকের অধিকার- আমরা তা আজো নিশ্চিত করতে পারিনি।... আমি মনে করি, উচ্চশিক্ষা কেবল মেধাবীদের জন্য অবারিত হওয়া উচিত।"

লক্ষ্যহীনভাবে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ না করে বৃত্তিমূলক শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান খুঁজে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

না হলে হীরক রাজা যেমন পাঠশালা বন্ধ করে দিয়েছিলেন এই বলে যে লেখাপড়া শিখে অনাহারে মরতে হবে; বর্তমান করোনা মহামারির নির্মম বাস্তবতায় কতশত স্কুল, কলেজ বন্ধ হবে এবং শিক্ষিত কর্মহীন বেকার তৈরী হবে তা ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে।

Side banner