kalchitro
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

"স্মরণে: কান্তকবি রজনীকান্ত সেন"


কালচিত্র | নাফিউল হক নাফিউ প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০২১, ১২:০৮ এএম

নাফিউল হক নাফিউ

স্মরণে: কান্তকবি রজনীকান্ত সেন

 

বাংলা ভাষায় যে পাঁচজন কবি কবিতার পাশাপাশি সঙ্গীত রচনায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন, তাদের বলা হয় "পঞ্চকবি"। রজনীকান্ত সেন সেই "পঞ্চকবি"দেরই একজন। অন্যরা হলেন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুল প্রসাদ সেন।

রজনীকান্ত সেনের জন্ম ১২৭২ বঙ্গাব্দের ১২ই শ্রাবণ, বুধবার ভোররাতে অর্থাৎ ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দের ২৬ এ জুলাই। পিতা গুরুপ্রসাদ সেন ও মাতা মনোমোহিনী দেবীর ৩য় সন্তান ছিলেন রজনীকান্ত সেন।

রজনীকান্ত সেন ছিলেন রবীন্দ্রনাথের চার বছরের ছোট। অর্থাৎ তিনি রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়েরও সমসাময়িক কবি তিনি। রজনীকান্তের জন্মস্থান বর্তমান বাংলাদেশের পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহকুমাতে। তার মা মনমোহিনী দেবী সঙ্গীতানুরাগী ছিলেন। বাবা গুরুপ্রসাদ সেন পেশায় ছিলেন আইনজীবী।

রজনীকান্ত সেনের মা মনোমোহিনী দেবী বাংলা সাহিত্যের প্রতি বেশ অনুরক্ত ছিলেন। তিনি এ বিষয়ে কিশোর রজনীকান্তের সাথে আলাপ-আলোচনা করতেন। এই আলোচনা-পর্যালোচনাই তাঁর ভবিষ্যত জীবনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল।

রজনীকান্ত ওকালতি পেশায় গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট ও সন্তুষ্ট হতে পারেননি। জীবন ধারণের জন্য ওকালতি শুরু করেছিলেন বটে কিন্তু সংগীতরচনা ও কাব্যসাধনায় নিবেদিতপ্রাণ রজনীকান্ত আইনব্যবসাকে অন্তর থেকে গ্রহণ করতে পারেন নি । ১৮৯১ সালে আইন বিষয়ে পড়াশুনার শেষে রজনীকান্ত রাজশাহি শহরে ওকালতি ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তবে তাতে তিনি মনোনিবেশ করতে পারেননি। এ সময় থেকে মৃত্যুর প্রায় এক বছর পূর্ব পর্যন্ত রজনীকান্তের জীবন এক অখন্ড আনন্দের খনি ছিল। তাঁর সঙ্গীত-প্রতিভাই তাঁকে অমর করে রেখেছে।

কবি হিসেবেও যথেষ্ট সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন রজনীকান্ত সেন। নির্মল আবেগ ও কোমল সুরের ব্যঞ্জনায় তাঁর গান ও কবিতাগুলো হয়েছে ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ।

তিনি হিরন্ময়ী দেবী নাম্নী এক বিদূষী নারীকে ১৮৮৩ সালে (৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১২৯০ বঙ্গাব্দ) বিবাহ করেন। হিরন্ময়ী দেবী রজনী'র লেখা কবিতাগুলো নিয়ে আলোচনা করতেন। কখনো কখনো তার কবিতার বিষয়বস্তু সম্পর্কে মতামত ও সমালোচনা ব্যক্ত করতেন।

শৈশবকাল থেকেই তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও স্বাবলীল ভঙ্গীমায় বাংলা ও সংস্কৃত - উভয় ভাষায়ই কবিতা লিখতেন। তিনি তার রচিত কবিতাগুলোকে গান আকারে রূপ দিতে শুরু করেন। পরবর্তীতে বাদ্যযন্ত্র সহযোগে গান পরিবেশন করতেন।

১৫ বছর বয়সে কালীসঙ্গীত রচনার মাধ্যমে তার অপূর্ব কবিত্বশক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

৭ আগস্ট, ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে কলকাতার টাউনহলে একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিলাতী পণ্য বর্জন এবং স্বদেশী পণ্য গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন বাংলার প্রখ্যাত নেতৃবর্গ। ভারতের সাধারণ জনগণ বিশেষতঃ আহমেদাবাদ এবং বোম্বের অধিবাসীগণ ভারতে তৈরী বস্ত্র ব্যবহার করতে শুরু করেন। কিন্তু এ কাপড়গুলোর গুণগতমান বিলাতে তৈরী কাপড়ের তুলনায় তেমন মসৃণ ও ভাল ছিল না। এর ফলে কিছুসংখ্যক ভারতবাসী খুশী হতে পারেননি। এই কিছুসংখ্যক ভারতীয়দেরকে ঘিরে রজনীকান্ত রচনা করেন তার বিখ্যাত দেশাত্মবোধক ও অবিস্মরণীয় গান—

মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই;

দীন দুখিনি মা যে তোদের তার বেশি আর সাধ্য নাই৷

এই একটি গান রচনার ফলে রাজশাহীর পল্লী-কবি রজনীকান্ত সমগ্র বঙ্গের জাতীয় কবি - কান্তকবি রজনীকান্ত হয়ে উঠলেন ও জনসমক্ষে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করলেন।

বি.এল ডিগ্রী অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শেষ করে ১৮৯১ সালে তিনি রাজশাহীতে আইন পেশায় নিয়োজিত হয়েছিলেন। তার জ্যেঠা অর্থাৎ বাবার বড় ভাই তখন রাজশাহীতে উকিল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ফলে আইন পেশায় রজনী'র দ্রুত উত্তরণ ঘটতে থাকে। কিন্তু আইন পেশার পাশাপাশি সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনেই বেশি সম্পৃক্ত রাখতেন নিজেকে। ফলশ্রুতিতে তিনি তার সুনাম হারাতে থাকেন। মক্কেলদের কাছে চাহিদামাফিক সময় দিতে পারতেন না। পরবর্তীকালে কিছুদিন তিনি নাটোর এবং নওগাঁ জেলায়ও অস্থায়ীভাবে মুন্সেফ হিসেবে কাজ করেছিলেন রজনীকান্ত সেন।

রজনীকান্তের শেষ দিনগুলো ছিল অসম্ভব ব্যথায় পরিপূর্ণ। তিনি ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯১০ সালে (১৩১৭ বঙ্গাব্দের ২৮শে ভাদ্র) মঙ্গলবার রাত্রি সাড়ে আট ঘটিকার সময় লোকান্তরিত হন।

আজ ২৬ এ জুলাই, কান্ত কবির জন্মদিন, জন্মদিনে তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

তথ্যসূত্র : (দেশ, বইয়ের দেশ, দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক কালের কণ্ঠ, দৈনিক যুগান্তর, করুণাময় গোস্বামী : সঙ্গীত কোষ, বাংলা একাডেমী, সুধীর চক্রবর্তী : বাংলা গানের সন্ধানে এবং ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।)

Side banner